রোববার ইরানের খোরামাবাদ, যানজান ও আহভাজ শহরে মিছিল থেকে দেশের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলি খামেনির পদত্যাগ ও তাঁর ‘নিপাত’ যাওয়ার দাবিতে স্লোগান দেয়া হয়েছে।
আবহার শহরে বিক্ষোভকারীরা দেশের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলি খামেনির ছবি-ওলা সুবিশাল ব্যানারে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।
আটত্রিশ বছর আগে ইরানে যে ইসলামিক বিপ্লব হয়েছিল, তার পর সে দেশে গ্র্যান্ড আয়াতোল্লাহ-র বিরুদ্ধে এই ধরনের বিক্ষোভ প্রায় নজিরবিহীন বলা চলে।
বিবিসি পার্সিয়ান বিভাগের বিশ্লেষক কাসরা নাজি বলছেন, ইরানের বিভিন্ন প্রান্তে মূলত তরুণ ও পুরুষ এই বিক্ষোভকারীরা সরাসরি দেশ থেকে মোল্লাতন্ত্র উচ্ছেদের ডাক দিচ্ছেন।
তাদের এই বিক্ষোভ ইরানের ছোট ছোট শহরেও ছড়িয়ে পড়ছে এবং ক্রমশ আরও ব্যাপক আকার নিতে যাচ্ছে বলেও তিনি মনে করছেন।
এদিকে ইরানে সরকার বিরোধী বিক্ষোভকারীদের আন্দোলন চলতে থাকলে, শক্ত হাতে তা দমন করা হবে এমন হুশিয়ারি দিয়েছে দেশটির বিপ্লবী বাহিনী।
দেশটিতে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে জীবনমান নিম্নমুখী হয়েছে, এমন অভিযোগে তৃতীয় দিনের মত ইরানের বিভিন্ন বড় শহরে বিক্ষোভ চলছে।
বিপ্লবী বাহিনীর কমান্ডার অভিযোগ করেছেন, বিক্ষোভকারীরা দ্রব্যমূল্যের বাইরে রাজনৈতিক ইস্যুতে স্লোগান দিচ্ছে এবং তারা সরকারী সম্পত্তিতে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে।
ইরানের এক সংবাদ সংস্থাকে ব্রিগেডিয়ার ইসমাইল কাওসারি বলেছেন, বিক্ষোভকারীরা যদি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদেই রাস্তায় নামত, তাহলে তারা সরকার বিরোধী স্লোগান দিত না।
ইরানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হুশিয়ারি দিয়েছেন, আইন ভঙ্গকারী এবং সরকারি সম্পদ ধংসকারীদের পরে জবাবদিহি করতে হবে, এবং আজকের বিক্ষোভের জন্য কঠিন মূল্য দিতে হবে।
২০০৯ সালে সংস্কারের দাবির ব্যাপক বিক্ষোভের পর এই প্রথম দেশটিতে এরকম বড় প্রতিবাদ হচ্ছে।
শুক্রবার দেশটির উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় শহর মাশহাদে শুরু হওয়া বিক্ষোভ পরে অন্য শহরগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে।
তেহরানে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও বিক্ষোভ হচ্ছে।
ইরানের ইসলামিক রেভ্যুলিউশনস গার্ড বা বিপ্লবী বাহিনীর সঙ্গে আয়াতোল্লাহ আলি খামেনির সম্পর্ক বেশ ঘনিষ্ঠ, এবং এই বাহিনী দেশে ইসলামি শাসন ব্যবস্থা চালু রাখতে বদ্ধ পরিকর।
মূলত দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে এ বিক্ষোভ শুরু হলেও তা এখন সরকার বিরোধী বিক্ষোভে রূপ নিয়েছে।
গতকালও ইরানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক নির্দেশে কোন বিক্ষোভে অংশ না নেয়ার জন্য জনগণকে সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়েছে, এই বিক্ষোভ অবৈধ।
কিন্তু শনিবার সামাজিক মাধ্যমের অজ্ঞাতপরিচয় পোস্ট থেকে ইরান জুড়ে আরো বিক্ষোভের ডাক দেয়া হয়েছে।
গত কয়েকদিন ধরে হাজার হাজার মানুষ বিভিন্ন শহরের বিক্ষোভে অংশ নেয়।
শনিবার রাষ্ট্রীয় প্রচারমাধ্যম দাবি করে, সরকারের সমর্থনে হাজার হাজার মানুষ মিছিল করছে।
গতকাল সরকারের সমর্থকরা শনিবার মাঠে নেমেছে এবং সরকার নিয়ন্ত্রিত টেলিভিশন চ্যানেলে দাবি করা হয়েছে, হাজার হাজার মানুষ সরকারের পক্ষে মিছিলে যোগ দিয়েছে।
২০০৯ সালের ব্যাপক বিক্ষোভও ইরানের সরকার কঠোরভাবে দমন করেছিল।
সূত্র, বিবিসি